মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম, পঞ্চগড়
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনই আরএন্ডএইচ-সিপাইপাড়া রোড ভায়া কাশিমগঞ্জ রোড পর্যন্ত ১ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের চার ভাগের এক ভাগ কাজ শেষ হতে না হতেই কাগজে-কলমে ঠিকাদারের বিল পাস করা হয়েছে। কাজের অগ্রগতি না দেখেই অর্থের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিল পাস করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (জিডিডিআইআরডিপি) প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫০৩ টাকা প্রাক্কলিত ও ১ কোটি ২ লাখ ৩২ হাজার ৯২৮ টাকা চুক্তিমূল্য ব্যয়ে ১ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণের দায়িত্ব পায় বোদা পঞ্চগড়ের মোতাহার এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে সেই সড়কে গত ২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরে ঠিকাদার ইউসুফ আলীর অধীনে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্মাণ শেষ করার সময়সীমা ছিল চলতি বছরের ২ জুন পর্যন্ত। পরে আরও সময় বাড়ানো হয়েছে। কাজ শরুর সময়সীমা প্রায় ৯ মাস পার হলেও কাজের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো নয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সড়কটিতে সাব-গ্রেডের প্রথম লেয়ারে শুধু বালি ও খোয়া ফেলা হয়েছে। এখনও ২০০ মিটার সড়ক নির্মাণ বাকি রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, যেটুকু কাজ হয়েছে, সেটাতেও নিম্নমানের খোয়া ও অতিরিক্ত বালি ব্যবহার করা হয়েছে।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে তেঁতুলিয়া এলজিইডির দায়িতপ্রাপ্ত সাইড ইঞ্জিনিয়ার ও সার্ভেয়ার জয়নাল আবেদীন এবং নির্বাহী প্রকৌশলী মিলেই আইবাসের অজুহাত দেখিয়ে বিল পাসের কাজটি সম্পন্ন করেছেন। মূলত উপজেলা প্রকৌশলী ইদ্রিস আলী খান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গত ১৫ থেকে ১৬ জুন ছুটিতে গেলে ১৭ থেকে ১৯ জুন অতিরিক্ত দায়িত্ব পান পঞ্চগড় সদর উপজেলার এলজিইডি প্রকৌশলী রমজান আলী। দায়িত্ব পাওয়ার মাত্র ৩ দিনের মধ্যে তিনি তেঁতুলিয়ায় না এসেই প্রকল্প পরিদর্শন ছাড়াই একাধিক সড়ক বা প্রকল্পের বিল পাস করেন। যার মধ্যে এই প্রকল্পও রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদার, সাইড ইঞ্জিনিয়ার ও অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীর মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে বিল পাস করা হয়। এদিকে জয়নাল আবেদিন একজন সার্ভেয়ার হয়েও ওই অফিসের প্রায় রাস্তার কাজই তার দায়িত্বে থাকলে ওই কাজে অনিয়ম বেশিই হয় অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা পলাশসহ এলাকাবাসী বলেন, সড়ক নির্মাণ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বালির পরিমাণ অনেক বেশি। আমরা চাই কাজটা যেন টেকসই ও ভালোভাবে হয়।
উপজেলা এলজিইডির সার্ভেয়ার জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বিল উত্তোলনের প্রক্রিয়া হয়েছে। কাজ শেষ করে ঠিকাদার বিল পাবেন। তিনি আরও বলেন, ১৭ থেকে ১৯ জুনের মধ্যেই ওই রাস্তার বিল পান হয়েছে।’
উপজেলা প্রকৌশলী ইদ্রিস আলী খান বলেন, তিনি ছুটি নেওয়ার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সুস্থ হয়ে গত ২২ জুন অফিস করাকালীন জানতে পারেন তিনি ছুটিতে থাকাকালীন ওই রাস্তার বিল পাস করা হয়েছে।
তেঁতুলিয়ায় অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা প্রকৌশলী (পঞ্চগড় সদর) রমজান আলী বলেন, তিনি তেঁতুলিয়ায় দায়িত্ব নিতে রাজি হননি নির্বাহী প্রকৌশলী স্যার তাকে জোর করে দায়িত্ব দিয়েছেন। বিল পাসের জিজ্ঞাসায় তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে নির্বাহী স্যারকে বলতে পারেন।
ঠিকাদার ইউসুফ আলী বলেন, কাজ না করেই কি কেউ বিল দেয়। অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের কথা জানিনা অন্তত এলজিইডি ওরা কাম না করে কখনোও বিল দেয় না।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলার এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ জামান বলেন, ‘১৫ থেকে ২১ তারিখ উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিল মেইল করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার ২১ তারিখ রিলিজ নিয়েছেন ওই রাতেই তিনি উপজেলায় এসেছেন। এদিকে আইবাসে বিল দাখিলের শেষ তারিখ ছিল ২২ জুন। স্বাভাবিকভাবে আমরা সেই সময় আইবাসে দিয়েছি। তবে ২২ জুন বিকালের দিকে আইবাসে একদিনের সময় বাড়ানো হয়েছে। কাজ শেষ না করে চূড়ান্ত বিল কখনই আমরা দিই না, এটি লিখতে পারেন।’
এ ব্যাপারে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, এ বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন না। সরেজমিনে গিয়ে রাস্তাটি পরিদর্শন করবেন এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
